Recents in Beach

কলমি শাক চাষ পদ্ধতি

কলমি শাক (বা কলমি শাক) একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর জলজ বা আর্দ্রতা-প্রিয় leafy সবজি। এটি চাষ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। এখানে কলমি শাক চাষের সম্পূর্ণ পদ্ধতি দেওয়া হল:

কলমি শাক চাষ পদ্ধতি



১. উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি

· জলবায়ু: কলমি শাক উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ভাল জন্মে। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল এ চাষের জন্য উপযুক্ত।
· মাটি: দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি যা জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ এবং সেচ ও নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা আছে, তা কলমি শাকের জন্য আদর্শ। মাটির pH ৫.৫ - ৬.৫ এর মধ্যে থাকা ভাল। কলমি শাক জলাবদ্ধ বা ভেজা জমি পছন্দ করে, এমনকি এটি হালকা জলেও (যেমন ধানের ক্ষেতের আইলে) জন্মানো যায়।

২. জমি তৈরি

· জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে সমতল ও নরম করে নিতে হবে।
· জমিতে যেন জল জমে থাকতে পারে বা সহজে সেচ দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
· শেষ চাষের সময় জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার (যেমন: গোবর সার) প্রয়োগ করতে হবে।

৩. জাত নির্বাচন

বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু স্থানীয় ও উন্নত জাত রয়েছে। যেমন:

· স্থানীয় জাত: স্থানীয় বাজারে পাওয়া যায়, সাধারণত সবুজ ডাঁটা ও পাতা বিশিষ্ট।
· উন্নত জাত: কিছু উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে যা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবিত।

৪. বংশবিস্তার ও চারা তৈরী

কলমি শাক সাধারণত দুটি উপায়ে বংশবিস্তার করা যায়:

· বীজ থেকে: বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর চারা রোপণ উপযোগী হয়।
· কাণ্ডের টুকরো থেকে (ভেজিটেটিভ): এটি সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। পুরনো গাছের কাণ্ড ১৫-২০ সেমি লম্বা টুকরো করে কেটে সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। কাণ্ডে কমপক্ষে ২-৩টি গিঁট (node) থাকতে হবে।

৫. রোপণ পদ্ধতি

· রোপণের সময়: সারা বছরই কলমি শাক রোপণ করা যায়, তবে ফাল্গুন-চৈত্র (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) থেকে ভাদ্র-আশ্বিন (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাস পর্যন্ত প্রধান রোপণ সময়।
· দূরত্ব: সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০-১৫ সেমি রাখা ভাল।
· কাণ্ডের টুকরো রোপণের সময় মাটির মধ্যে ২-৩টি গিঁট ঢোকাতে হবে।

৬. সারের পরিমাণ

(প্রতি হেক্টর/বিঘা অনুযায়ী সামঞ্জস্য করতে হবে)

· জৈব সার: চাষের সময় ৮-১০ টন/হেক্টর গোবর সার দিতে হবে।
· রাসায়নিক সার (সাধারণ সুপারিশ):
  · ইউরিয়া: ২০০-২৫০ কেজি/হেক্টর
  · টিএসপি: ১৫০-১৮০ কেজি/হেক্টর
  · এমওপি: ১০০-১২০ কেজি/হেক্টর
· প্রয়োগ পদ্ধতি: শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি ও অর্ধেক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে, প্রথম কিস্তি রোপণের ১৫-২০ দিন পর।

৭. সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা

· জমি সর্বদা ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে রাখতে হবে। শুকনো মাটিতে কলমি শাক ভাল জন্মে না।
· প্রয়োজন অনুযায়ী হালকা সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
· নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

৮. রোগ ও পোকামাকড় দমন

· প্রধান রোগ: পাতা পচা, ড্যাম্পিং অফ।
· প্রধান পোকা: এফিড, জ্যাসিড, লিফ মাইনার।
· সমন্বিত দমন পদ্ধতি:
  · রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার।
  · অতিরিক্ত সেচ ও জল জমা avoidance।
  · জৈব বালাইনাশক ব্যবহার (যেমন: নিমের তেল)।
  · রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হলে মাঠে প্রয়োগের আগে লেবেল দেখে ব্যবহার করতে হবে।

৯. ফসল তোলা

· রোপণের ৪০-৫০ দিন পর থেকে কলমি শাক তোলা শুরু করা যায়।
· সাধারণত, গাছের উচ্চতা ২৫-৩০ সেমি হলে কাণ্ডসহ পাতা কেটে বা ভেঙে সংগ্রহ করা হয়।
· একবার রোপণ করলে ২-৩ বার ফসল তোলা যায়, প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর।

১০. ফলন

· ভালোভাবে পরিচর্যা করলে হেক্টরপ্রতি ৩০-৪০ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

· কলমি শাক পানিতে জন্মাতে পারে, তাই এটি এমন জমিতেও চাষ করা যায় যেখানে অন্য সবজি জন্মে না।
· এটি একটি পুষ্টিকর সবজি, যা আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সমৃদ্ধ।

সতর্কতা: কলমি শাকের কাণ্ড ও পাতা যদি খুব বেশি পানি থেকে সংগ্রহ করা হয়, তবে সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত, কারণ কদাচিৎ এতে লিভার ফ্লুক পরজীবী থাকার ঝুঁকি থাকে।

এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি সহজেই বাড়ির আঙিনায় বা ছোট পরিসরে কলমি শাকের চাষ করতে পারবেন।

Post a Comment

0 Comments